হলদে গাঁও খাটুরিয়া

হলদে গাঁও খাটুরিয়া

ভুবন রায় নিখিল

নীলফামারী জেলার কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মহসীন রেজা রুপম। কয়েক দিন আগে কথায় কথায় বলেছিলেন খাটুরিয়ার কথা। গ্রামটি নাকি শীতে হলুদ রং ধরে। সরিষার ফুল ওড়ে বাতাসে। আকাশের নীলও মজে যায়। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার খাটুরিয়া। দুটি পথ আছে_ডোমার অথবা নীলসাগর হয়ে।
শীত আসি আসি করছে। বেলা দুপুর হবে। কেমন নিশ্চুপ চারিধার। হঠাৎই খাটুরিয়ার কথা মনে পড়ল। ভাবনা আর না বাড়িয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দিলাম। রাস্তায় উঠে দেখি মন্টুর চায়ের দোকানে বিজয় চক্রবর্তী বসে আছেন। তাঁকে উদ্দেশ্য বিধেয় খুলে বললাম। বেশি রা কাড়লেন না, পেছনে চড়ে বসলেন। রাস্তা পাকা, গাড়িঘোড়া বেশি নেই। আধঘণ্টা পর বসুনিয়ার হাটে উঠে এলাম। হাটের বয়স অনেক, বড়ও বেশ। এর ধার ঘেঁষে শুরু হয়েছে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা। পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারও রয়েছে কাছে।
হাটের পাকা সড়কে দাঁড়িয়ে মাথা ঘোরালে চোখ ভরে যায় সবুজ ফসলে। এক দোকানে ঢুকে চা খেতে বসি। আসল উদ্দেশ্য, কথাপাড়া। একজন বললেন, খাটুরিয়া গ্রামটি অনেক বড়, অনেক পাড়া এর। ডোমারের সাংবাদিক বন্ধু আবু ফাত্তাহ পাখি ফোনে ধনীপাড়ার পথ ধরিয়ে দিলেন। পেঁৗছতে ১৫ মিনিট লাগল। বেশ গোছগাছ। বাড়িগুলো গাছের বেড়ায় আলাদা, ঘরগুলো সাফসুফ। গাঁয়ের এক বুড়ো চাচা আমাদের সঙ্গী হলেন, এ কথা-সে কথায় নিয়ে গেলেন সরিষা প্রান্তরে। যতদূর চোখ যায়, ওই যে আকাশ, যেখানে লেগেছে তত দূর পর্যন্ত হলুদে মাখামাখি। মাঝেমধ্যে আল পড়ছে। একটা আল ধরে এগিয়ে যাই। কেমন একটা ঘোরলাগা গন্ধ জড়িয়ে ধরে। যেতে যেতে সরিষায় ডুবে যাই। শরীরে হলুদ লেগে যায় আর মনে অসীম আনন্দ।
সূর্য হেলতে শুরু করলে বেরিয়ে আসি। সঙ্গী বুড়ো চাচা জানান, ধান ওঠার পর পরই সরিষা লাগানো হয়েছে। আলুও লাগানো যেত, তবে আলুর সংরক্ষণে হ্যাপা অনেক। এ ছাড়া সরিষা আবাদে জমি উর্বর হয়। ঘরের তেলের চাহিদাও মেটে।
ফেরার পথে ডোমার থানার কৃষি কার্যালয়ে যাই। কর্মকর্তা নূর আলম শাহরিয়ার ও রাশিদুল ইসলাম ছিলেন। তাঁরা জানান, টরি-৭ জাতের সরিষা ৭০ দিনের মধ্যে ঘরে ওঠে। ফলন হয় প্রতি বিঘায় কম করেও পাঁচ মণ, খরচ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আশা করা যায়, বাজারে বিক্রি করা যাবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। রাস্তায় নেমে করতোয়ার পাশ দিয়ে চলতে থাকি। নদীর ধার সবুজে সয়লাব। আলু আর শাকসবজি আবাদ করা হয়েছে। এবার পুরো নীলফামারীতে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার আসাদ গেট, কলেজ গেট বা কল্যাণপুর থেকে নাবিল, হানিফ, বাবলু, রোজিনাসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে ডোমার যাওয়া যায়। ভাড়া ৫২০ টাকা। ডোমার শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাটুরিয়া। অটোরিকশায় ভাড়া ১০ টাকা।

 

সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ ২৭/১১/২০১১ ইং