তুফানির চরে বনভোজন

তুফানির চরে বনভোজন

মো. সাজ্জাদ হোসেন

তুফানির চর বলে ডাকত লোকজন আগে। শহরের মানুষ হদিস পেয়ে গিয়ে দেখে, শত-সহস্র লাল কাঁকড়ায় সয়লাব দ্বীপটি। সাগরের মাঝে পুরো একা। যেতে হয় উত্তাল আগুনমুখা পার হয়ে। তো মুখে মুখে নাম ছড়িয়ে পড়ল ক্র্যাব আইল্যান্ড।
নভেম্বরের ২৩ তারিখ ছিল সেটা। দারা-পুত্র-পরিবার নিয়ে রওনা হলাম কুয়াকাটা। সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছা। কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটার রাস্তা বেজায় খারাপ। ২৫ কিলোমিটার ধরে মেরামতি। বিকেল নাগাদ হোটেলে পেঁৗছে শরীর ঝাঁকালাম কিছুক্ষণ। তাঁরপর গেলাম সৈকতে। সূর্য ততক্ষণে আমার চেয়েও বেশি ক্লান্ত। বেশি আরাম হলো না। হোটেলে ফিরে রাতের খাবার তাড়াতাড়িই সারলাম। ঘুমিয়ে পড়তেও দেরি হলো না। লাভ হলো, ঘুম ভাঙল সূর্য ওঠারও আগে। সূর্য ওঠা ভালো করে দেখতে যেতে হবে গঙ্গামতি, সেই ৯ কিলোমিটার দূরে। মোটরসাইকেল হবে বাহন। পেঁৗছাতে পেঁৗছাতে আকাশ লাল হতে শুরু করল। দেশের আর কোথাও এভাবে সূর্য ওঠে না। এতই সুন্দর আর মধুর যে সারা জীবন মনে থাকবে।
কুয়াকাটায় দেশের সবচেয়ে উঁচু বৌদ্ধমূর্তি আছে। পদ্মাসনে বসা, ২৭ ফুট উঁচু, কাঠের। এখানে আরো আছে বিস্তীর্ণ ঝাউবন, লেবুর চর, কুয়া (কুয়াকাটা তো সে থেকেই এসেছে) ইত্যাদি। সূর্য ওঠা শেষ হলে ভাবি, যাই কোথায়? আবুল ভাই বললেন, ক্র্যাব আইল্যান্ডের কথা। নামেই মাত হয়ে গেলাম। তবে তক্ষুনি রওনা হওয়া গেল না। হোটেলে ফিরে ব্যবস্থাপত্র করতে লাগলাম। রাতে বাজার করলাম_বনভোজন হবে যে! সকালে গ্রিনওয়ার্ল্ডের নৌকা গাঙচিলে রওনা দিলাম। সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে বলে লাইফজ্যাকেট পরে নিলাম। সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অথৈ জলে এসে পড়লাম। চোখজোড়া শুধু পানি। মন চলে গিয়েছিল কোন দূর অজানায়। হঠাৎ এক ধাক্কায় ছিটকে পড়লাম। মাঝি বলল, 'এখানে আগুনমুখা মিলেছে।' ছলকে ছলকে ঢেউ উঠছে। তাল সামলানো কঠিনই বটে। ভয় তাড়াতেই বুঝি সুজিত গান ধরল, 'আজি ঝড়ের রাতে আমার অভিসার'। হাসি পেয়ে গেল, অভিসারের এই নমুনা হলে মধুমিতা পালাবে দুই দিনেই। যাহোক অবশেষে হাসি-কান্না শেষ করে কাঁকড়াদ্বীপে পেঁৗছালাম। নামার পর আমরা দুই দলে ভাগ হলাম। একদল লাকড়ি জোগাড় করতে গেল, অন্যদল বারবিকিউর জোগাড়যন্ত্রে বসল। রান্নার সব আয়োজন শেষে সমুদ্রে ঝাঁপাতে গেলাম। উঠে এসে দেখি সব প্রস্তুত। খেয়েদেয়ে খানিক আলসেমি। এরপর দ্বীপ বেড়াতে বেরোলাম। লালের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে পুরো দ্বীপ। বালুতে একটু কাঁপন উঠলেই কাঁকড়াগুলো গর্তে ঢুকে পড়ে। ধরতে গিয়ে দৌড়ানোই সার হয়। তাও মন্দ নয়। দ্বীপটা নীরব, নির্জন। সাগরের বুকে একটা ভেলা বুঝি! দুপুরের পর পরই ফেরার পাঁয়তারা শুরু হলো। আবার আগুনমুখার সঙ্গে দেখা হওয়ার ভয়ে একটু থমকালাম। কিন্তু গতি কী?

কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। ভাড়া ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী গিয়ে তারপর বাসে যাওয়া যায় কুয়াকাটা। সমুদ্রসৈকতে গ্রিনওয়ার্ল্ডের ট্যুরিস্ট সেন্টার থেকে কাঁকড়াদ্বীপ যাওয়ার নৌকা ভাড়া নেওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া লাগে এক হাজার টাকা। থাকার জন্য আছে নীলাঞ্জনা, কুয়াকাটা ইন ইত্যাদি আবাসিক হোটেল।

 

সূত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ ১১/১২/২০১১ ইং